সোলায়মান মোহাম্মদ:
হুট করে ঘুম থেকে উঠে কোনো প্রকার পরিকল্পনা ছাড়া কেউ কারো মাথায় ছুরিকাঘাত করবে বিষয়টা এরকম না। কাউকে আঘাত করতে হলে অবশ্যই পরিকল্পনা কিংবা বেশ কিছু দিনের প্রস্তুতি লাগে। স্থানকাল পাত্র ভেদে পরিকল্পনাটি কয়েক মাস অনেক সময় বড় কোনো বিষয় হলে বছর ধরেই হয়তোবা পরিকল্পনা করে থাকে দুস্কৃতিকারীরা। আর এ পরিকল্পনার পিছনে থাকে অবশ্যই কোনো না কোনো ব্যক্তির ইন্ধন। রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক সংক্রান্ত বিষয় হলে থাকে রাজনৈতিক কোনো অপশক্তির দিকনির্দেশনাও।
হঠাৎ করেই খবর পেলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল স্যারের উপর অতর্কিত হামলা হয়েছে। মাথায় ছুরিকাঘাতের খবরটি শুনেই পিলে চমকে যাওয়ার অবস্থা। জাফর ইকবাল স্যারের উপর হামলা এটা সাধারণ কোনো হামলা ছিলো না। স্যারকে মেরে ফেলার জন্যই মাথায় ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো স্যারকে কেনো মারতে চেয়েছে? তার সাথে আর কে কে রয়েছে ? মূল পরিকল্পনাকারী কে? লেখালেখিই কি তাহলে স্যারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে? এসব চিন্তা মাথার মধ্যে খুব করে ঘুরপাক খাচ্ছে। দিনদুপুরে জনসম্মুখে এমনকি আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছুরিকাঘাত বিষয়টি দেশের অন্য দশজনের মতো আমিও মেনে নিতে পারছি না। তবে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদও দিতে হয় খুব অল্প সময়ের মধ্যে হামলাকারীকে ধরার জন্য। কিন্তু কথা থেকে যায় হামলার সাথে একজন মাত্র দুস্কৃতিকারী কি করে জড়িত থাকে? মূল পরিকল্পনাকারীকেও দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকারের বিষয়টি গভিরভাবেই দেখা দরকার।
স্যার শুধুমাত্র শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক না তিঁনি সমগ্র দেশের তথা এ জাতির শিক্ষক। সমাজ ও দেশের সকল প্রকার অসঙ্গতি নিয়ে রীতিমত যিনি কলমের মাধ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। বলা চলে সমাজ থেকে রাষ্ট্র্রীয় পর্যায়ের সকল অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খলের বিরুদ্ধেই স্যারের সংগ্রাম। বিশেষ করে শিক্ষাখাতে স্যারের সীমাহীন ভূমিকা, একটি সুনিয়ন্ত্রিত, প্রযুক্তিগত ও নকলমুক্ত পরীক্ষা প্রক্রিয়া তৈরীর পিছনে প্রতিনিয়তই লিখে চলছেন। যারা লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত তারা সাধারণত মুক্তমনা ও স্বাধীনচেতা স্বভাবেরই হয়। লেখার সময় লেখকরা সাধারণত বিবেচনা করে না লেখাটি কার বিরুদ্ধে যাবে। স্যার সেই তালিকায় অন্যতম একজন। স্যারের লেখায় কখনও পক্ষপাতের ইশারা টুকুও পাইনি। অনেক সময় সরকার বাহাদুরের বিপক্ষেও স্যারের লেখা চলে গেছে এমনকি সরকার প্রধানের বিপক্ষেও।
এ পর্যন্ত মুক্তমনা অনেক লেখককেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। একজন মানুষ স্বাধীণভাবে লিখবে এতেও এক শ্রেণীর জ্ঞান পাপী মূর্খ জাহিলদের বংশরা লেখকের স্বাধীন মত প্রকাশ করার দড়জা চিরতরে ধূলিসাত করতে মরিয়া হয়ে কোমর বেঁধে নেমেছে। স্বাধীনতা মানে কি কারো শিখেয়ে দেওয়া বুলি আওড়ানো না পক্ষপাতহীন সঠিক চিন্তা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা। লেখকের লেখায় যদি কারো দ্বিমত থাকে, আর থাকাটায় স্বাভাবিক তাহলে যার দ্বিমত আছে সেও লেখুক। দ্বিমত পোষণকারী নিজে লেখতে অক্ষম হলে ভাড়া করা লেখক দিয়ে লেখাক। ফুটবল খেলোয়ার কে হারাতে হলে মাঠে নেমে ফুটবলই খেলতে হবে। তেমনই কোনো রেসারকে হারাতে হলে দৌড়াতে হবে। তা না করে যদি ওই ফুটবলার বা রেসার কে মেরে ফেলা হয় তাহলে কিন্তু প্রকৃত জয়ী বা সফলকাম যাদেরকে মারা হয় তারাই হয়। কোনো লেখকের কথার উপযুক্ত জবাব দিতে হলে সেটা লেখেই দিতে হবে। সেটা না করে যদি লেখককে হত্যা করা হয় তাহলে সে যে ধর্মেরই থাকুক না কেনো তার কোনো ক্ষমা হওয়া উচিৎ নয়। ধর্মের সাথে লেখক বা কোনো বক্তার কথা বা যুক্তির মিল না হলেই হামলা বা বোমা ফাটানো। আর এটিই হলো ধর্মওয়ালাদের সব চেয়ে বড় ভুল। ধর্মকে রীতিমত ব্যবসার প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এদেশের বহু নামীধামী লোক যাদেরকে আমি সংক্ষেপে ধর্ম ব্যবসায়ী বলেই জানি।
যে ছেলেটি জাফর ইকবাল স্যারকে ছুরিকাঘাত করেছে তার গালে দাড়ি রয়েছে। দাড়ি রয়েছে বলেই যে সকল দাড়িওয়ালাদের খারাপ বলছি তা কিন্তু মোটেও না। বরং এই দাড়িটাই যাদের সাইনবোর্ড তাদের কথা বলছি। আমরা ইতিপূর্বে বহুবার দেখেছি ধর্মান্ধ কিছু মানুষের ধর্মের নামে অধর্মপনা। আমরা নিশ্চয়ই ভুলিনি আহসান হাবীব পিয়ারের মতো আলেমদের কথা। আহা! কি সুন্দর দাড়ি আর অবয়ব। কিন্তু এই দাড়ি, টুপি ও লম্বা পাঞ্জাবির আড়ালের চেহেরা কতটা নির্লজ্জ ও বেহায়পনার তা প্রকাশিত না হলে কত কিছুই না অজানা থেকে যেত। দাড়ি আর লম্বা জুব্বাকাব্বা পড়লেই আলোর দিশারি হওয়া যায় না। তার প্রমাণ কিন্তু সেই হযরত মুহাম্মদ (আ:) এর আমলে আবু জাহেলের ইতিহাস ঘাটলেই পাওয়া যায় তেমনই আবার এ যুগের বাংলা ভাই নামে খ্যাত জঙ্গিদের দিকে তাকালেও বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং ধর্মের নামে মাতামাতি করা টুপি দাড়িওয়ালা সাইনবোর্ডধারী ইসলামের শত্রুদের আরো সুচারুরূপে সনাক্তের মাধ্যমে জাতির কাছে প্রকাশ করতে হবে।
সরকারের শেষ মেয়াদে এসে দেশের সুধী সমাজ বা লেখকদের হামলা কিসের ইঙ্গিত বহন করে? সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের এটি নতুন কোনো পায়তারা নয়তো? দেশের প্রথম শ্রেণীর লেখক,বুদ্ধিজীবি, সমাজসেবক, ব্লগার ও অন্যান্য এ্যাকটিভিস্টরাও কি তাহলে হামলার আশঙ্কায় রয়েছে সেটাও ভেবে দেখতে হবে এ সময়ে এসে সরকারকে। সবশেষে জাফর ইকবাল স্যারের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের চিকিৎসার দাবী জানিয়ে লেখা শেষ করছি।

 

 

সোলায়মান মোহাম্মদ
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
০১৭১২৪১২৬২৫
sulaymansir87@gmail.com